ওয়েলস ২-০ গোলের লিড হারিয়ে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছে, দ্বিতীয়ার্ধে তিন মিনিটের মধ্যে আইসল্যান্ড সমতা ফিরিয়ে আনে।


 ক্রেইগ বেলামির অধীনে ওয়েলস জাতীয় ফুটবল দলের যাত্রা শুরু হয়েছিল আশার আলো নিয়ে, তবে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে নেশনস লিগের ম্যাচে ২-২ গোলে ড্র করার পর সেই আশা কিছুটা ম্লান হয়ে যায়। প্রথমার্ধে ২-০ গোলের লিড নিয়ে এগিয়ে থাকার পরও দ্বিতীয়ার্ধে হঠাৎ করেই ওয়েলস তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং তিন মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল হজম করে। এটি বেলামির জন্য প্রথম বড় ধাক্কা ছিল, কারণ তিনি তার দলের জন্য একটি নতুন আক্রমণাত্মক খেলাধুলার স্টাইল চালু করার চেষ্টা করছেন।


প্রথমার্ধে ওয়েলসের পক্ষে দুটি দারুণ গোল আসে। ব্রেনান জনসন প্রথম গোলটি করেন, হ্যারি উইলসনের একটি সেভ হওয়া শটের রিবাউন্ড থেকে। এরপর উইলসন নিজেই একটি লম্বা পাস পেয়ে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন, যা আসলে ছিল নেকো উইলিয়ামসের চমৎকার একটি ডায়াগোনাল পাস। প্রথমার্ধের ৩০ মিনিটের মধ্যে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে ওয়েলস দৃঢ় অবস্থানে চলে যায় এবং মনে হচ্ছিল তারা সহজেই এই ম্যাচটি জিতবে।


কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে দৃশ্যপট পুরোপুরি পাল্টে যায়। আইসল্যান্ড একের পর এক আক্রমণে চাপ বাড়াতে থাকে, যার ফলে তারা বেশ কয়েকটি সুযোগ মিস করলেও ৬৫তম মিনিটে লোগি টমাসন একটি নিচু শটে গোল করে ব্যবধান কমিয়ে আনে। এরপর মাত্র তিন মিনিট পর, টমাসন আবারো বল নিয়ে ওয়েলসের ডিফেন্স ভেদ করে তাদের পেনাল্টি বক্সে ঢুকে একটি ক্রস দেন, যা গোলরক্ষক ড্যানি ওয়ার্ড ভুল করে নিজের জালে পাঠিয়ে দেন। এই আত্মঘাতী গোলের ফলে ম্যাচটি ২-২ সমতায় ফিরে আসে এবং ওয়েলসের জন্য পরিস্থিতি বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।


এই ড্রয়ের ফলে ওয়েলসের জন্য বড় ধাক্কা আসে, কারণ তারা ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে একেবারেই নিজেদের ছন্দ ধরে রাখতে পারেনি। খেলোয়াড়রা বেশ হতবাক হয়ে পড়ে, এবং ম্যাচের শেষভাগে তারা আর আগের মতো আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে পারেনি। বেলামির জন্য এটি অবশ্যই হতাশাজনক, কারণ প্রথম দুই ম্যাচে তার নতুন স্টাইলের ফুটবল ওয়েলসের ভক্তদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু এই ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের পারফরম্যান্স সেই উত্তেজনা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে।



বেলামি তার নতুন কৌশলে দলকে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করছেন, যেখানে আক্রমণাত্মক খেলাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে, যেমনটি এই ম্যাচে দেখা গেল। বেলামি ও তার খেলোয়াড়রা আগেই বলেছিলেন যে এই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কৌশলে কিছু ভুল হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু আইসল্যান্ডের বিপক্ষে এমনভাবে লিড হারানো অবশ্যই হতাশার কারণ।


তবে সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। ওয়েলস এখনো গ্রুপে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এবং তাদের হাতে আরো ম্যাচ রয়েছে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার জন্য। আগামী সোমবার কার্ডিফে তারা মন্টিনেগ্রোর বিপক্ষে খেলতে নামবে। সেই ম্যাচে দলকে আরো বেশি নিয়ন্ত্রিত ও ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে হবে। বেলামি আশা করবেন, তার দল এই ড্র থেকে শিক্ষা নিয়ে শক্তিশালীভাবে ফিরে আসবে এবং গ্রুপের শীর্ষে থাকা তুরস্ককে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে।


এছাড়া, ওয়েলসের ভক্তরাও দারুণভাবে তাদের দলকে সমর্থন করছে। আইসল্যান্ডের শীতল আবহাওয়ার মধ্যেও ৫,২০০ জনের দর্শক সমাগমের মধ্যে প্রায় এক পঞ্চমাংশই ওয়েলসের সমর্থক ছিল। তাদের উপস্থিতি মাঠে দলের জন্য একটি শক্তিশালী অনুপ্রেরণা ছিল। যদিও দল দ্বিতীয়ার্ধে তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি, তবুও সমর্থকদের আশা থাকবে যে বেলামির অধীনে ওয়েলস একটি নতুন পথ খুঁজে পাবে এবং ভবিষ্যতে আরো সফলতা অর্জন করবে।


Post a Comment

Previous Post Next Post