গত বছর ১৮ অক্টোবরের ঘটনা ব্রাজিলের ফুটবলপ্রেমীদের মনে আজও গেঁথে আছে। সেদিন বাংলাদেশ সময় সকালবেলা, বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে উরুগুয়ের বিপক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ব্রাজিল ২-০ গোলে পরাজিত হয়েছিল। তবে ম্যাচের ফলাফলের চেয়েও বেশি আলোচনা তৈরি করেছিল ব্রাজিলের তারকা ফরোয়ার্ড নেইমারের চোট। ম্যাচের প্রথমার্ধে, ৪৩ মিনিটের মাথায় একটি সংঘর্ষের পর বাঁ হাঁটুতে প্রচণ্ড আঘাত পান নেইমার। তিনি মাঠেই পড়ে যান এবং প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে স্ট্রেচারে করে মাঠ থেকে বের করা হয়। তার অশ্রুসিক্ত চোখ এবং হতাশার দৃশ্য সেই মুহূর্তে শুধু ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের নয়, ফুটবল বিশ্বকেও নাড়া দিয়েছিল।
নেইমারের চোট এতটাই গুরুতর ছিল যে তিনি আর সেই ম্যাচে ফিরতে পারেননি। বাঁ হাঁটুতে এসিএল (অ্যান্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট) এবং দুটি মেনিসকাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, যা তাকে দীর্ঘদিনের জন্য মাঠের বাইরে রাখে। এই সময়ে ব্রাজিলের জাতীয় দলকে ছাড়াই খেলতে হয়েছিল একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, যেখানে নেইমারের অনুপস্থিতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। নেইমারকে ছাড়া ব্রাজিলের পারফরম্যান্সেও তার প্রভাব পড়ে। মাঠে না থাকার সময়কালে ব্রাজিল ১৪টি ম্যাচ খেলেছিল—যার মধ্যে তারা ৬টি জয় পায়, ৫টি ম্যাচ ড্র হয় এবং ৩টি ম্যাচে পরাজিত হয়। এমনকি ব্রাজিলের সাফল্যের হারও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে। নেইমার মাঠে থাকলে ব্রাজিল ৭৮.৬ শতাংশ ম্যাচ জিতে, আর নেইমার ছাড়া সেই হার কমে দাঁড়ায় ৬৩.৯ শতাংশে।
ব্রাজিলের জাতীয় দলের জার্সিতে নেইমারের অভিষেক হয়েছিল ২০১০ সালে। সেই থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ব্রাজিলের মোট ১৯২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে তিনি ১৩০টির বেশি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছেন। নেইমারের চোটগুলোর কারণে ৬২টি ম্যাচে ব্রাজিল তাকে ছাড়াই খেলেছে, এবং প্রতিবারই তার অনুপস্থিতি দলে একটি শূন্যতা তৈরি করেছে। বিশেষ করে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলিতে যেখানে নেইমারের গতি, দক্ষতা, এবং আক্রমণাত্মক ক্ষমতা ব্রাজিলের জয়ের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।
তারপর কেটে গেছে একটি বছর। নেইমার পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে গেছেন, আর ফুটবল ভক্তরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছেন কবে তিনি আবার মাঠে ফিরবেন। ঠিক এক বছর পর, ১৭ অক্টোবর ২০২৪ সালে, সুখবর আসে নেইমারের ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে। নেইমারের ক্লাব, সৌদি আরবের আল হিলালের কোচ হোর্হে জেসুস জানিয়েছেন, নেইমার পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং তিনি আবার অনুশীলনে ফিরেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে, আগামী সোমবার এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগে আল হিলালের হয়ে আল আইনের বিপক্ষে ম্যাচে মাঠে নামতে পারেন নেইমার। তবে নিশ্চিত কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া না হলেও, নেইমারের মাঠে ফেরার সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল।
আল হিলালের হয়ে নেইমার শেষ ম্যাচটি খেলেছিলেন গত বছরের অক্টোবরে, যখন এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগে নাসাজি মাজানদারানের বিপক্ষে মাঠে নামেন তিনি। সেই ম্যাচের পরই তিনি ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে উরুগুয়ের বিপক্ষে খেলার সময় চোট পান, যা তাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য মাঠের বাইরে রেখেছিল। নেইমারকে সৌদি প্রো লিগে এখনও নিবন্ধিত করা হয়নি, তবে এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের জন্য আল হিলাল তাকে নিবন্ধিত করতে পেরেছে।
এদিকে, ব্রাজিল জাতীয় দলেরও নেইমারের ওপর নির্ভরতা স্পষ্ট। আগামী নভেম্বর মাসে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ রয়েছে ব্রাজিলের। প্রথমটি ১৫ নভেম্বর, যেখানে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ হবে ভেনেজুয়েলা। এরপর ২০ নভেম্বর, নেইমারের চোটের ঠিক এক বছর পর, ব্রাজিল আবার উরুগুয়ের বিপক্ষে মুখোমুখি হবে। এই দুটি ম্যাচ ব্রাজিলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং নেইমারের মাঠে ফেরার ব্যাপারে তার ক্লাব আল হিলাল এবং ব্রাজিলের টিম ম্যানেজমেন্টও আশাবাদী।
ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম 'গ্লোবো স্পোর্ত' জানিয়েছে, এই দুটি ম্যাচের আগে নেইমারের মাঠে ফেরা প্রয়োজন। আল হিলালের হয়ে একটি ম্যাচে খেলেই তিনি ব্রাজিলের জাতীয় দলের স্কোয়াডে ফিরতে পারেন। আল হিলাল যদি সবকিছু ইতিবাচক দেখতে পায়, তবে আল আইনের বিপক্ষে নেইমারকে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। যদি তা না হয়, তবে এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের পরবর্তী ম্যাচটি ৪ নভেম্বর, যেখানে তিনি আবার মাঠে নামতে পারেন। ব্রাজিলের স্কোয়াডের প্রাথমিক ঘোষণা ২৭ অক্টোবরের মধ্যে হতে পারে, এবং ১ নভেম্বর চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা করা হবে।
নেইমারের মাঠে ফেরার অপেক্ষায় আছেন তার অসংখ্য ভক্ত, যারা আবার তাকে ব্রাজিলের বিখ্যাত হলুদ জার্সিতে দেখতে চান।
Post a Comment